Sunday, July 18, 2010

পদ্মা রিসোর্ট, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ


যান্ত্রিক জীবনের ধরাবাঁধা নিয়ম, কোলাহল, শব্দ ও বায়ু দূষণ এবং সর্বোপরি নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহ শেষে একটুরো নির্মল প্রশান্তির জন্য আজ আপনাদের নিয়ে যাবো পদ্মা নদীর মাঝখানের জেগে উঠা চরে গড়ে উঠা পদ্মা রিসোর্টে।  ফ্যামিলি নিয়ে অথবা বন্ধুদের সাথে জমবেশ আড্ডায় পদ্মা রিসোর্ট হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা।

ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্টের দূরত্ব ৫০ কিমি. সাথে গাড়ি থাকলে যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। পদ্মা রিসোর্ট গড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার নিকটবর্তী পদ্মা নদীর বুকে জেগে উঠা চরে।

অনেক ভাবেই যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্টে। যেতে পারেন বাস সার্ভিসে অথবা নিজের সাথে নেওয়া গাড়ি করে। লৌহজং থানা মসজিদ ঘাট পর্যন্ত সরাসরি আসতে পারবেন ঢাকার গুলিস্থান থেকে ছেড়ে আসা গাংচিল পরিবহনে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৪৫ টাকা।


অথবা আপনি মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে পারেন “গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহন” (মাওয়া-গুলিস্থান-মাওয়া) কিংবা “গোধুলী পরিবহনে” (মাওয়া-গাজীপুর/যাত্রাবারি-মাওয়া)। সেক্ষেত্রে মাওয়া ফেড়ীঘাট যাবার আগেই লৌহজং থানার যাবার পথের চৌরাস্তায় মোড়ে আপনাকে নামতে হবে। পরে রিক্সা অথবা অটোরিক্সাতে ১৫ মিনিটের পথ।

 ১) মাওয়া ফেরী ঘাট ২) লৌহজং চৌরাস্তা মোড় ৩) লৌহজং পুলিশ ফাঁড়ী ৪) পদ্মা রিসোর্ট

আর নিজের সাথে গাড়ি থাকলে পথ চিনে যেতে কোন অসুবিধা হবে না। সেক্ষেত্রে যাওয়ার পথে আপনাকে দুই জায়গায় মোট ৬০ টাকা টোল দিতে হবে। গাড়ি রাখার জন্য লৌহজং থানা প্রাংগনে আছে সুবিধা মত অনেক জায়গা।  

পদ্মার অপলক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য বর্ষার বিকল্প নাই আর সেজন্যই পদ্মা রিসোর্টে এই সময়ে ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশী। তাই সরকারী ছুটির দিনে যাবার আগে অবশ্যই আগে থেকে কটেজ বুক করে যেতে হবে। বর্ষার মৌসুমে সরকারী ছুটির দিন ছাড়া অথবা অন্য কোন মৌসুমে কটেজ বুক ছাড়াই আপনি যেতে পারবেন পদ্মা রিসোর্টে। আগে থেকে বুক করার জন্য পদ্মা রিসোর্টের ঢাকা অফিসে আপনাকে বুকিং মানি দিতে হবে। রিসোর্টের সাথে যোগাযোগের সমস্থ তথ্য পাবেন পদ্মারিসোর্ট.নেট এ।


লৌহজং থানার পাশের মসজিদ ঘাটে গিয়ে দেখতে পারবেন সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ২-৩ টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পিডবোট। এইগুলোই আপনাকে পৌঁছে দিবে ওপারের রিসোর্টে এ।

লৌহজং থানার কো-অর্ডিনেটঃ 23°28'00.31"N 90°19'54.99"E

  ১) লৌহজং পুলিশ ফাঁড়ী ২) পদ্মা রিসোর্ট

লৌহজং থানার ঘাট থেকেই আপনি পদ্মা রিসোর্টের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পারবেন। সুবিশাল কোনো অট্টালিকা নয়, কুঁড়েঘরের আদলেই তৈরি এই রিসোর্টের অবকাঠামো। বিশাল পদ্মার মাঝে রং বেরঙ্গের কটেজগুলো যেনো আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পদ্মার বুকে জেগে উঠা এই বিশাল বিস্তৃত চরটি যেন প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য নিয়ে নিয়ে দীর্ঘকাল দাঁড়িয়ে আছে। রিসোর্টের চারপাশ ঘিরে কাশবনের বিশাল ঝাড় আর সামনের দিকে চরের সাদা বালির উপর ঘন ঘাসের সমারোহ। এ যেন আকাশ, সবুজ আর নদীর নিঃসর্গ মিলনমেলা। বর্ষায় ফুলে ফেঁপে উঠা পূর্ন যৌবনা পদ্মা যেন এই রিসোর্টের রুপ বারিয়ে দেয় বহুগুন। এই সময় কটেজের নিচে পানি চলে আসায় দুর থেকে মনে হয় পানির উপর ভাসছে পদ্মা রিসোর্ট।

পদ্মা রিসোর্টের কো-অর্ডিনেটঃ 23°27'46.50"N 90°19'55.22"E


পদ্মা রিসোর্টে পৌঁছানোর পরেই রিসোর্ট অফিস থেকে আগে থেকে বুকিং দেওয়া অনুযায়ী আপনাকে কটেজ বুঝিয়ে দিবে। মোট ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজের দিয়ে গড়ে উঠা এই রিসোর্ট। এর মধ্যে ১২টি কটেজের নাম করা হয়েছে বাংলার ১২ মাসের নাম অনুযায়ী আর বাকি ৪টা নাম হয়েছে ঋতুর নামে। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার পছন্দের কটেজের নাম উল্ল্যেখ করতে পারেন বুকিং এর সময়ই। নাহলে যে কটেজগুলো বুক হয় নাই সেগুলোই জুটবে আপনার ভাগ্যে। আপনি যদি একটু নিরিবিলি থাকতে চান তো সর্বপশ্চিমের কটেজগুলো হবে আপনার জন্য আদর্শ যা বাংলা মাসের নাম অনুযায়ী শুরু।


আপনি সারাদিনের জন্য অথবা রাত্রি যাবনের জন্য কটেজ নিতে পারেন। সারাদিন বাবদ কটেজ ভাড়া ২৩০০টাকা (২০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট) আর রাতের জন্য ৩৪৫০ টাকা (৩০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট)। প্রতিটি কটেজে থাকতে পারবেন ৮জন করে। প্রতিটি কটেজ সাজানো সুন্দর আসবাবপত্র দিয়ে৷ ঘরের চাল সুন্দরী পাতা দিয়ে তৈরি ৷ দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে ৷  ডুপ্লেক্স এই কটেজের নিচ তলায় আছে এক সেট সোফা ও টেবিল এবং একটি সিঙ্গেল বেড, দেড় তলায় অত্যাধুনিক ফিটিংসহ (কমোড, বেসিন, লুকিং গ্লাস, শাওয়ার) ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাথরুম আর বসার জন্য সুবিশাল বারান্দা, ২য় তলায় পাবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো ২টি সিঙ্গেল বেড, মধ্যখানে সেন্টার টেবিল, ওয়ারড্রোব, লাইট, ফ্যান ইত্যাদি।


রিসোর্টে বিদ্যুৎ সরবারোহ জন্যে আছে জেনারেটরের ব্যবস্হা। যদিও ফ্যান অথবা এসির অভাব আপনি অনুভব করতে পারবেন না। চারদিকে পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় সারাক্ষনিই পাওয়া যায় মৃদু ঠাণ্ডা বাতাসের স্পর্শ৷


রুমে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে খাওয়ার কথা মনে হতে পারে। চিন্তা নেই, পদ্মা রিসোর্টের সু-সজ্জিত রেস্টুরেন্ট যা ২০টি টেবিল চেয়ার দিয়ে সাজানো সেখানে আপনি ২০০ জন লোক নিয়ে লাঞ্চ বা ডিনারসহ যেকোন পার্টি আয়োজন করতে পারেন। রেস্টুরেন্টে যাবার আগে আপনাকে রিসোর্ট অফিস থেকে জনপ্রতি ৩৫০টাকা (৩০০টাকা + ১৫% ভ্যাট) দিয়ে ফুড টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। দুপুরের খাবার মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, ইলিশ ফ্রাই (১ পিস), মুরগীর মাংস (বড় ১ পিস), সবজি, সালাত। মিনারেল ওয়াটার আলাদা ভাবে কিনতে হবে যার ১লিটারের দাম ৪০টাকা। পাবেন কোমলপানীয় (ক্যানঃ ৪০ টাকা, পেপসি ১.৫ লিটারঃ ১০০ টাকা, পেপসি ২ লিটারঃ ১৫০ টাকা)। পদ্মা রিসোর্টে খাবার জিনিসের দাম অনেক বেশি। বাহিরে থেকে খাবার আনার অনুমতিও নাই। তবে এন্ট্রির সময় যেহুতু চেক করে না, আপনি আপনার ব্যাকপ্যাকে করে খাবার নিতে পারেন। এতে রিসোর্টের ডাকাতি হাল থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন।


জমবেশ একটা খাওয়ার পরে রেস্টুরেন্টের বিশাল বারান্দায় চা হাতে বসে থাকতে পারেন কিছুক্ষন। দূরে পদ্মা নদীতে রং-বেরঙ্গের পাল তোলা নৌকা আর কাশবনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু বাতাসের দোলা। দেখতে দেখতে কেটে যাবে বেশ কিছুটা সময়।


বিনোদনের জন্য অতুলনীয় এই পদ্মা রিসোর্ট৷ ভরা বর্ষায় যখন পানির লেভেল কটেজের পাটাতন পর্যন্ত চলে আসে তখন আপনি রাবার বোটে ঘুরতে পারেন রিসোর্টের সীমানায়। নদীর শীতল পানিতে গোসল করতে পারেন অথবা স্পিডবোট (প্রতি ঘন্টা ২৫০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট), সাম্পান নৌকা (প্রতি ঘন্টা ১২০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট) অথবা ট্রলার (প্রতি ঘন্টা ৬০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট) করে ঘুরতে পারেন পদ্মা নদী আর উপভোগ করতে পারেন পদ্মার অপার সৌদর্য্য।


শুস্ক মৌসুমে আপনি ইচ্ছে করলেই এই বালুচরে করতে পারেন পিকনিক ৷ ইচ্ছে করলে চড়তে পারেন ঘোড়ার পিঠে৷ সময় কাটানোর জন্য আছে দোলনা, ইজি চেয়ার। রাতে করতে পারেন ক্যাম্পফায়ার ও বারবিকিউ। পদ্মা রিসোর্ট পূর্ণিমায় হয়ে ওঠে মায়াবি এবং সকালটি দেখলে মনে হবে ক্যানভাসে আঁকাঁ এক মনোহর ছবি ৷

জায়গা অনুযায়ী অতুলনীয় পদ্মা রিসোর্ট। তবে খাবার এর মান আর সার্ভিস আরোও ভাল হতে পারতো। নিরাপত্তা নিয়েও খুব একটা ঝামেলা নাই। লৌহজং থানার পাশেই পদ্মা রিসোর্ট, যেকোন প্রয়োজনে থানা থেকে ৫মিনিটের ভিতরে সাপোর্ট পাওয়া সম্ভব।

Wednesday, June 16, 2010

বগালেক, রূমা, বান্দরবান


বগালেক বা বগা হ্রদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির একটি হ্রদ।

ড্রাগনের লেক বা বগালেকের অবস্থান বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কেওকারাডাং এর কোল ঘেঁষে। বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। রুমা বাজার থেকে দুইভাবে বগা লেকে যাওয়া যায়। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী প্রিয় হন তো হেঁটে রওনা দিতে পারেন অথবা শুস্ক মৌসুমে যেতে পারেন চাঁন্দের গাড়ি করে। আপনি যে ভাবেই যান না কেন, রুমা বাজার থেকে বাধ্যতামুলক ভাবে সাথে অন্তত একজন গাইড নিতে হবে এবং রিপোর্ট করতে হবে রুমা আর্মি ক্যাম্পে।

রুমা বাজারের কো-অর্ডিনেটঃ 22°02'57.30"N 92°24'31.80"E
রুমা থানার কো-অর্ডিনেটঃ 22°02'30.42"N 92°24'11.76"E



গাইডকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে দিতে হবে। চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করলে আড়াই হাজার টাকা পড়বে।


হাঁটা পথে ঝিরিপথ ধরে গেলে সময় লাগবে ৫ ঘন্টার মত। এই পথে আপনাকে পাড় হতে হবে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়ি ধিরি। আর শুস্ক মৌসুমে চাঁন্দের গাড়িতে গেলে সময় লাগবে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত। পথে পরবে অনেক ছোট বড়ো টিলা। কোন কোন সময় চাঁন্দের গাড়ি এতটাই বাঁকা হয়ে উপরে উঠতে থাকে যে, তখন সামনে আকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। শুস্ক মৌসুমে সাঙ্গু নদীতে পানি না থাকা এক সময় চাঁন্দের গাড়ি সাঙ্গু নদী ও পাড় হবে। যাওয়ার পথে কখনো পড়বে বিশাল পাহাড়ি কলার আর নাম না জানা অনেক ফলের বাগান। বগা লেকের নিচ থেকে ট্রাকিং করে উপরে উঠতে আপনার সময় লাগবে ৪৫ মিনিটের মতন। প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে পাহাড়ের চূড়ায় এই লেক তৈরি হয়। এর আয়তন ১৫ একর। এই হ্রদটি তিনদিক থেকে পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত। এই শৃঙ্গগুলো আবার সর্বোচ্চ ৪৬ মিটার উঁচু বাঁশঝাড়ে আবৃত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫৭ মিটার ও ৬১০ মিটার উচ্চতার মধ্যবর্তী অবস্থানের একটি মালভূমিতে অবস্থিত।



বগালেকের প্রথম দর্শন আপনার সারা জীবনের মনে রাখা ঘটনা গুলোর মধ্যে একটি হবে। দূর থেকে গাঢ় নীল রং এর বগালেক এর পাশে যে গ্রামটিকে দেখতে পাবেন ওটি নাম বগা মুখ পাড়া। এটা বমদের গ্রাম। আর্মি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে সরু পথ ধরে আপনি চলে আসবেন বগালেক সমতলে। এখানে পৌছানোর পর আপনাকে বগা আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে।



অদ্ভুদ সুন্দর এই নীল রঙ্গের লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি। স্থানীয়ভাবে দুইশ' থেকে আড়াইশ' ফুট বলা হলেও সোনার মেশিনে ১৫১ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পাওয়া গেছে। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎসও নেই। তবে বগালেক যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগাছড়া (জ্বালা-মুখ) নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায়। আর লেকের সাথে সাথে আসে পাশের নদীর পানিও ঘোলাটে রং ধারন করে। কারণ হিসেবে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। এই প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়। প্রচুর বিশালকায় মাছে ভরা। প্রচুর জলজ লতাপাতা আর খাঁড়া পাথরের পাড়ের জন্য চমৎকার তাপমাত্রার এই পানিতে সাঁতার কাটার সময় একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।



থাকা এবং খাবার জন্যে লারাম বম, সিয়াম বম (স্থানীয় স্কুল টিচার সিয়াম দিদি) সহ কয়েকটি দোকান আছে। প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে রাতে থাকার ও তিন বেলা খাবার ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। আছে একটি স্কুল ও একটি গির্জা। এখানে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের একটি অত্যাধুনিক রেস্ট হাউজ নির্মাণাধীন রয়েছে। মাঝে সাঝে গ্রামীনফোন মোবাইল নেটওয়ার্ক মিলবে গির্জার আর আর্মি ক্যাম্পের কোনায়।

সিয়াম দিদির কটেজের কো-আর্ডিনেটঃ 21°58'46.16"N 92°28'15.32"E

 ১) বগালেক প্রথম দর্শন ২) বগালেক আর্মি ক্যাম্প ৩) সিয়াম দি'র কটেজ ৪) বমদের গ্রাম ৫) মুরংদের গ্রাম

বমদের গ্রামটা খুব একটা বড় নয়। হাতে সময় নিয়ে আপনি ঘুড়ে দেখতে পারেন পুরো গ্রাম। ছবি তোলার নেশা থাকলে সাথে ক্যামেরা নিন। তবে সাবধান, পাহাড়ি এলাকায় অবশ্য পালনীয় কিছু নিয়মের ভিতর একটি নিয়ম হলো “পাহাড়িদের বিশেষ করে মেয়েদের বিনা অনুমতিতে ছবি নেবেন না”। এই এলাকা এতই দুর্গম যে এইখানে অনেকে বাংলা বলতে পারে না। গোত্র বিশেষে এখনও অনেক গোত্রের মেয়েরা অল্প কাপড় পরিধান করে, কিন্তু খৃষ্টান মিশনারীদের উল্ল্যেখযোগ্য ভুমিকার কারনে শিক্ষার আলো এখানে পৌঁছাতে শুরু করেছে।



বগা লেকের জন্ম ইতিহাস নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী গ্রামগুলোয় একটি মজার মিথ প্রচলিত আছে, সেইটি অনেকটি এই রকম - “অনেক অনেক দিন আগে একটি চোঙা আকৃতির পাহাড় ছিল। দুর্গম পাহাড়ে ঘন অরণ্য। পাহাড়ের কোলে বাস করত আদিবাসীর দল। ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা। পাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রায়ই গবাদিপশু আর ছোট বাচ্চারা ওই চোঙ্গা আকৃতির পাহাড়টিতে হারিয়ে যেত। গ্রামের সাহসী পুরুষের দল কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখতে পায়, সেই পাহাড়ের চূড়ার গর্তে এক ভয়ঙ্কর দর্শন বগা বাস করে। বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন। কয়েকজন মিলে ড্রাগনটিকে আক্রমণ করে হত্যা করে ফেলে। ফলে ড্রাগনের গুহা থেকে ভয়ঙ্কর গর্জনের সঙ্গে আগুন বেরিয়ে আসে। নিমিষেই পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম এক পাহাড়ি লেকের জন্ম হয়”



বাংলাদেশের ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে বগাকাইন হ্রদ (বগা লেক) মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
 
বমদের গ্রাম ছাড়াও লেকের উলটা দিকে পাহাড়ের নিচে আরেকটা গ্রাম আছে মুরংদের। বগালেক থেকে ২০ মিনিট নিচে পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে এই গ্রাম। শিক্ষার তুলনা করলে বমদের থেকে এরা অনেক পিছিয়ে। তবে ছবি তোলার আশা আপনার আপাতত এখানে বাদ দিতে হবে কারন মেয়েরা তো অনেক পরে, ছোট্ট ছেলে মেয়েরাও ক্যামেরার সামনে আসে না।

মুরংদের গ্রাম থেকে বগালেক ফিরার পথে উপরের দিকে উঠতে যেয়ে এবার আপনার সময় প্রায় ২০ মিনিট বেশী লাগবে।



মুরং গ্রামের কো-অর্ডিনেটঃ 21°59'01.39"N 92°28'05.25"E

সারাদিন আলোছায়ার খেলা শেষে আপনার সামনে বগালেক হাজির হবে আগুল ধরা সন্ধ্যা নিয়ে। লেকের পানিতে মৃদু ঢেউ এর খেলা আর পশ্চিম দিগন্তে গোধুলীর রক্তিম আভা।


ভাগ্য ভাল হলে ভরা পূর্নিমাতে বগালেককে আবিস্কার করবেন নতুন এক রুপে। বগালেকের পিছনের পাহাড়গুলো বগালেক থেকে উঁচু হওয়ায় চাঁদ উঠার অনেক পরে আলো পড়ে লেকের পানিতে। নিকোশ কালো অন্ধকার থেকে হঠাৎ করেই উজ্জল আভা। বগালেকের অবস্থান অনেক উপরে হওয়ায় চাঁদ অনেক বড় মনে হয়। গির্জা ছুঁয়ে চাঁদটা যখন আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকে তখন আবছায়া আলোয় গির্জার ক্রুশটা এক ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে।


বগালেকের সবচেয়ে সুন্দর হল রাত। সিয়াম দিদির হাতে রান্না করা রাতের খাবার শেষে কিছুক্ষন বগালেকের পাড়ে পাথরের উপর বসে থাকুন। রাতকে আরো গভীর হতে দিন। সবসময়ই পরামর্শ একা একা কোথাও না যাবার জন্য। সবাই ঘুমায়ে গেলেও আর্মি ক্যাম্পে রাতভর আর্মি টহল চলে। চারদিকে সবাই ঘুমিয়ে গেলে ছোট একটা দল নিয়ে আপনি গির্জার ডান দিকে সরু পথ ধরে পিছনের পাহাড়ের ঢালের বনের দিকে চলে যান। পুর্নিমা থাকলে চাদের আলোয় পথ দেখে চলুন। অল্প কিছুদূর যাবার পর আপনি একটি শুকনো ঝরনা দেখতে পাবেন। ছোট বড় পাথর পড়ে আছে বিছিন্ন ভাবে। যেকোন একটি পাথরের উপর কোন শব্দ না করে বসে থাকুন কিছুক্ষন। কিছুক্ষনের ভিতর সমস্ত বন জেগে যাবে। চোখ বন্ধ করে শুনুন সে শব্দ। নিশ্তব্ধতার ভিতরে ঝিঝি পোকার ডাক, নাম না জানা নিশাচর পাখির ডাক। অনুভব করুন, মনে হতে থাকবে শব্দগুলো ক্রমশ আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। এ রকম রাত বোধ হয় জীবনে একবার ই আসে।


সকাল, সন্ধ্যা বা রাতে প্রতি বেলায়ই বগা লেক নতুন রূপে ধরা দেয়। বগালেক থেকে কেওকারাডাং খুব কাছেই। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার ভ্রমন তালিকায় যোগ করতে পারেন।



পাহাড়ি এলাকায় যাবার পূর্বে অবশ্য পালনীয় কিছু নিয়ম
পাহাড়ে সবসময় আইন মেনে চলবেন, কখনও পাহাড়ি কালচারের প্রতি অসম্মানজনক কোনো আচরণ বা মন্তব্য করবেন না, বন্য জীবজন্তু বা পরিবেশের ক্ষতি করবেন না, পাহাড়িদের বিশেষ করে মেয়েদের বিনা অনুমতিতে ছবি নেবেন না এবং কোনো অবস্থাতেই গাইড ছাড়া একা কোথাও যাবে না।